(ফরাসি গণিতজ্ঞ, সেড্রিক ভিলানি, ‘থিয়োরেম ভিভান্ত’ গ্রন্থ রচনা করেন ২০০৮ সালে। বইটি খানিকটা ডায়রি লেখার ঢঙে রচিত। মূল ফরাসি থেকে বাংলায় অংশ বিশেষ অনুবাদ করছি স্রেফ খেলার ছলে। কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই।)।
লিয়ঁ, ২৩শে মার্চ, ২০০৮
রবিবার দুপুর ১টা। প্রায় জনহীন গবেষণাগারে দু’জন ব্যস্ত গণিতজ্ঞ ছাড়া বোধকরি আর কেউ নেই। লিয়ঁর এই গবেষণাকেন্দ্রে আমি গত আট বছর ধরে আছি। ইকোল নরম্যাল সুপিরিয়রের তিন তলার এই ঘর আমাদের যাবতীয় নিবিড় চিন্তনের সূতিকাগার।
এই ঘরে একটা বেশ মস্ত আরামকেদারা আছে। সেখানে বসে আমি মাকড়ষার মত আঙুল ছড়িয়ে তাল ঠুকছিলাম টেবিলে। ঠিক যেমন আমার পিয়ানো শিক্ষক আমায় শিখিয়েছিলেন।
আমার বাম দিকে, টেবিলে, একটা কম্পিউটার রাখা। ডানদিকে, একটা মস্ত ক্যাবিনেট। সেখানে কয়েকশো গণিত ও পদার্থবিদ্যার বই ঠাসা। আমার ঠিক পেছনে, টানা বই-এর তাক। সেখানে হাজার হাজার পাতার প্রবন্ধ, আদ্যিকালের গবেষণাপত্রের ফোটোকপি রাখা। এসব সেই সময়ের সংগ্রহ যখন আমার বেতন নিতান্ত অল্প ছিল। পয়সা খরচ করে বই-তেষ্টা মেটানো তখন কল্পনাতীত। এছাড়া তাকে সারদিয়ে অনেকগুলি খসড়া, হাতে লেখা ক্লাসনোট, সেমিনার নোট রাখা। কথ অগুনতি ঘণ্টা যে আমি গবেষণাপত্র পাঠ শুনে কাটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। এগুলি তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
সামনের ডেস্কে বসে আছে গ্যাসপার্ড। গ্যাসপার্ড আমার ল্যাপটপের নাম। প্রবাদপ্রতীম গণিতজ্ঞ গ্যাসপার্ড মঞ্জের নামে রাখা। ডেস্কের ওপর বেশ কিছু কাগজ রাখা। সেখানে দিন দুনিয়ার আট মুলুক থেকে আনা অজস্র গাণিতিক আঁকিবুকি কিলবিল করছে।
সামনের দেওয়াল জুড়ে মস্ত হোয়াইট বোর্ড। আমার সহচর ক্লেমেন্ট মোহুট একটা মার্কার পেন নিয়ে, বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে। তার চোখে বিদ্যুৎ খেলছে যেন।