ashani.dasgupta@cheenta.com

শয়তানের সংখ্যা

“শয়তানের সংখ্যা কাকে বলে জানো?” কফি হাউসে বসেছিলাম। টেবিলে ২২ টাকার ইনফিউশন কফি আর রেনল্ডসের নীল-সাদা পেন। এইসব অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে গণিত-আড্ডা জমেছে।

শয়তানের সংখ্যা নাকি বীজগণিতের আবিষ্কার। জ্যামিতির লোকজন মাথা নেড়ে বলে, “intuition-এ পাচ্ছি না ভাই”। স্বয়ং ইউক্লিড এর হদিশ পাননি। তার জগত-বিখ্যাত পুস্তক “Elements”-এ শয়তানের সংখ্যার নামগন্ধ নেই।

প্রথম ঠাহর করেছিলেন পপাস। ভদ্রলোক মিশর দেশের আলেক্সান্দ্রিয়া শহরে থাকতেন। কায়রো থেকে শ’দুই কিলোমিটার দূরে। আপাতত আমরা কফি খেতে খেতে বুঝে নিই সেই তাজ্জব ব্যাপারখানা।

মনে করো একটা সরলরেখা L1-এর ওপর চারখানা বিন্দু আছে – A, B, C, D। বিন্দুগুলো পর পর অবস্থিত। প্রথমে A, তার ডাইনে B, এভাবে। (ছবিতে দেখো)।

তুমি শুধাতে পারো, “সরলরেখা কি? বিন্দুই বা কাকে বলে?” অত তলিয়ে ভাবলে গপ্পোটা মাঠে মারা যাবে। সেসব নিয়ে আপাতত বলছি না। মোটামুটি সরলরেখা আর বিন্দু বলতে মনের মধ্যে যে ছবিটা ভেসে ওঠা, সেটুকুই ভাবতে পারো।

খানিক দূরে, সরলরেখা L-এর বাইরে, একটা বিশেষ বিন্দু বেছে নিয়েছি। নাম দিয়েছি P। এই P বিন্দুতে যেন একটা লাইটহাউস জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। প্রাচীন আলেক্সান্দ্রিয়াতেও নাকি এমনি এক বাতিস্তম্ভ ছিল। কে জানে, তার তলায় বসে, পপাস এসব ভাবতেন কিনা।

যদি কাগজের ওপরের দিকে P বিন্দু থাকে, তাহলে তার নীচে $L_1$ -সরলরেখা থাকবে। আরো খানিকটা নীচে $L_2$ নামে যে কোনো একটা রেখা এঁকে নাও। P থেকে যেন আলো এসে A বিন্দুতে পড়ছে। তার ছায়া পড়েছে $L_2$-রেখার ওপর $A_1$-এ। তেমনি ভাবে B -এর ছায়া $B_1$-এ, C-এর ছায়া $C_1$-এ এবং D-এর ছায়া $D_1$-এ এসে পড়েছে।

দুটো ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। A, B, C, D-এর মধ্যেখানের দূরত্ব যা খুশি তাই হতে পারে। $L_1$ এবং $L_2$ রেখা দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তার যেমন খুশি ঝুঁকে থাকতে পারে (তাদের মধ্যেখানের কোণ যেমন খুশি হতে পারে)।

এবার আমরা শয়তানের সংখ্যার হদিশ পাবো।

দূরত্ব আর কোণ, এদুটোর ওপর নির্ভর করছে না এমন কোন সংখ্যা আমরা খুঁজতে চাই। A, B, C, D. আরে $A_1, B_1, C_1, D_1$-এর মধ্যে সম্পর্কতো একটা আছে। পরের বিন্দুগুলোতে ছায়া পড়েছে। এই সম্পর্কটাকে আমরা একটা সংখ্যা দিয়ে বেঁধে ফেলতে চাই। চিনে নিতে চাই।

প্রথমে C -তে দাঁড়িয়ে A আর B-কে দেখো। তাদের অনুপাত নাও।

$ \frac{CA}{CB} $

তারপর D -তে দাঁড়িয় A আর B-কে দেখো। তাদের অনুপাত নাও।

$\frac{DA}{DB}$

শেষমেশ এই অনুপাত দুটোর অনুপাত নেওয়া যাক!

$$ \frac{\frac{CA}{CB}}{\frac{DA}{DB}} $$

এই অনুপাতের অনুপাত হলো শয়তানের সংখ্যা! গণিতের ভাষায় ক্রস রেশিও। ছায়াবিন্দু-গুলো দিয়ে যদি হিসেব করো, একই সংখ্যা পাবে!

$$ \frac{\frac{C_1 A_1}{C_1 B_1}}{\frac{D_1 A_1}{D_1 B_1}} = \frac{\frac{CA}{CB}}{\frac{DA}{DB}} $$

অন্য কোন সরলরেখায় যদি ছায়া পরে, সেসব ছায়াবিন্দুর অনুপাতের অনুপাত পালটাবে না। জ্যামিতির লোকজন ভেবে কুল পায়নি যে কেন এমনটা হয়। কি মধু আছে এই অনুপাতের অনুপাতে? রবার্ট হার্টশর্ন লিখেছেন, “if you are a geometer at heart, you may say it is an invention of the devil”।

পপাস এসব ভাবছিলেন খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে। প্রায় ১৩০০ বছর পর, নবজাগরণের ইউরোপে দেসার্গাস আর পন্সেলেট ক্রস রেশিও-র পুনরাবিষ্কার করেন। তারও কিছুকাল পরে ফিলিক্স ক্লাইন জ্যামিতির নতুন সংজ্ঞা দিলেন।

বললেন প্রথমে “স্পেস”-এর একখানা বৈশিষ্ট্য K-কে পাকড়াও করো। তারপর এমন সব ফাংশনকে খুঁজে নাও যাদের অভিঘাতে K পালটায় না। যেমন ছায়া পড়লে ক্রসরেশিও পালটায় না। ক্লাইনের মতে, জ্যামিতির আদত রস হচ্ছে এসব ফাংশনের জগৎ-এ। অব্যয় কে ঘিরে নৃত্য করছে অজস্র ম্যাপ।

সেসব বলতে গেলে আর একটা কফি লাগবে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *